ফেনীতে বর্তমানে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
লিটন হোসাইন জিহাদ: ফেনীতে বর্তমানে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি বিরাজ করছে। গত ৪৮ ঘণ্টায় ২৮২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে এবং আগামী কয়েক দিনও ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। ফেনীর ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়া উপজেলার প্রায় ২০০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে, যেখানে প্রায় ২ লক্ষ মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছেন।
স্থানীয় প্রশাসন এবং সশস্ত্র বাহিনীসহ বিভিন্ন সংস্থা উদ্ধার কার্যক্রমে নিয়োজিত রয়েছে, তবে পানি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। কিছু এলাকায় মানুষকে নৌকার মাধ্যমে নিরাপদ স্থানে সরানো হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, মূহুরী নদীর পানি বিপদসীমার ৮৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে মানুষ খাদ্য, পানি ও আশ্রয়ের জন্য হাহাকার করছে, এবং অনেক রাস্তা-ঘাট পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে
ফেনীর এই বন্যার প্রভাবে অনেক মানুষ তাদের ঘরবাড়ি হারিয়েছে এবং খাদ্য, পানি ও আশ্রয়ের তীব্র সংকটের মুখে পড়েছে। অনেক গ্রামে সিঙ্গেল-ফ্লোর ঘরগুলি পুরোপুরি পানিতে ডুবে গেছে, এবং মানুষজন বাধ্য হয়ে তাদের বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে বেরিয়ে পড়ছে।
উদ্ধার কার্যক্রমের জন্য স্থানীয় প্রশাসন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড এবং ফায়ার সার্ভিস একযোগে কাজ করছে। নৌকার মাধ্যমে মানুষদের নিরাপদ স্থানে সরানোর প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে, তবে পানির উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে এই উদ্ধার কাজটি অত্যন্ত জটিল হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে, ফুলগাজী ও পরশুরাম এলাকার পরিস্থিতি আরও সংকটময়, যেখানে স্থানীয় প্রশাসন দুটি ছোট নৌকার সাহায্যে উদ্ধার কাজ পরিচালনা করছে। এছাড়াও, সেনাবাহিনী ও কোস্ট গার্ডের সাহায্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।
একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেছেন, “আমি কখনো এ ধরনের বন্যা দেখিনি। আমাদের ঘরের চুলা পানিতে ডুবে গেছে, ফলে গত দুই দিন ধরে রান্না করা সম্ভব হয়নি। আমরা সবাই অনাহারে রয়েছি এবং কোনো সাহায্য পাচ্ছি না।”
ফেনীর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবুল কাসেম জানিয়েছেন, মূহুরী-কহুয়া-সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ২৭টি অংশ ভেঙ্গে গেছে, যার ফলে পানি প্রবাহিত হয়ে স্থানীয় এলাকায় ঢুকে পড়ছে। এছাড়াও, আগের বন্যার সময় ভাঙ্গা ২৬টি বাঁধের কারণে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে।
ফুলগাজী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা তানিয়া ভূঁইয়া জানিয়েছেন, “এটি উপজেলাটির ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা। ছয়টি ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রাম পানির নিচে তলিয়ে গেছে, এবং বহু মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে।” এছাড়াও, তিনি বলেন, “ফায়ার সার্ভিস এবং স্বেচ্ছাসেবী ছাত্রদের সাহায্যে রাতে নৌকায় করে বন্যা কবলিতদের উদ্ধার করা হচ্ছে। সেনাবাহিনী ও কোস্ট গার্ডের সহায়তায় উদ্ধার কাজ চালানো হচ্ছে।”
আগামী কয়েক দিনের আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী, ফেনীতে আরও বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা বন্যার পরিস্থিতি আরও সংকটময় করে তুলতে পারে। এলাকাবাসী এখনও চরম দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছেন, এবং স্থানীয় প্রশাসন ও উদ্ধারকারীদের জন্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে, জরুরি ভিত্তিতে সাহায্য ও ত্রাণ কার্যক্রম চালানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সরকারের পাশাপাশি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলিরও এ বিষয়ে এগিয়ে আসা উচিত, যাতে করে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের পুনর্বাসন এবং জীবিকা নিশ্চিত করা যায়।
Responses