ভারতের আগ্রাসন: পানি, সীমান্ত হত্যা ও মাদক চোরাচালানের ফাঁদে বাংলাদেশ
লিটন হোসাইন জিহাদ:
ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ক বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতামূলক হলেও, কিছু ক্ষেত্রে ভারতের আগ্রাসী মনোভাব ও আচরণ বাংলাদেশের জনগণের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে, সীমান্ত হত্যা, পানি ভাগাভাগি এবং মাদক চোরাচালান—এই তিনটি সমস্যা বাংলাদেশের জন্য গভীর সংকট সৃষ্টি করছে।
প্রথমত, সীমান্ত হত্যা বাংলাদেশের জন্য একটি বড় ধরনের মানবিক বিপর্যয়। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (BSF) প্রায়শই বাংলাদেশি নাগরিকদের ওপর গুলি চালায়, যা দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের উপর কালিমা লেপন করে। একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো ২০১১ সালে ফালানি খাতুন নামের ১৪ বছর বয়সী এক কিশোরীর হত্যাকাণ্ড, যা বিশ্বব্যাপী আলোচিত হয়। BSF তাকে সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুলিয়ে রেখে গুলি করে হত্যা করে, যা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। BSF এবং বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (BGB) এর মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক এবং বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও, সীমান্ত হত্যার এই প্রবণতা এখনো অব্যাহত রয়েছে।
দ্বিতীয়ত, পানি ভাগাভাগির বিষয়টি বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। ভারতের সাথে বাংলাদেশের ৫৪টি অভিন্ন নদী আছে, যেগুলোর পানি বণ্টনের ক্ষেত্রে ন্যায্যতা রক্ষা করা জরুরি। তবে, ভারত ফসলের মৌসুমে পানি আটকে রাখে এবং বর্ষায় অতিরিক্ত পানি ছেড়ে দিয়ে বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি অঞ্চলে কৃত্রিম বন্যা সৃষ্টি করে। উদাহরণস্বরূপ, ফেনী নদী এবং কুশিয়ারা নদীর পানি ভাগাভাগি নিয়ে দুই দেশের মধ্যে চুক্তি থাকলেও, কার্যত বাংলাদেশের প্রয়োজন অনুযায়ী পানি সরবরাহ নিশ্চিত হয় না।
তৃতীয়ত, মাদক চোরাচালানও বাংলাদেশের যুবসমাজকে ধ্বংস করছে। ভারত থেকে বিশেষ করে ইয়াবা, ফেনসিডিল, এবং হেরোইন বাংলাদেশের মধ্যে প্রবেশ করে এবং এসব মাদক সমাজের মধ্যে নানা ধরণের অপরাধমূলক কার্যকলাপ ও সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি করে। এই মাদক চোরাচালানের ফলে বাংলাদেশে আইন-শৃঙ্খলার পরিস্থিতি অবনতি হচ্ছে এবং যুবসমাজের নৈতিক অবক্ষয় ঘটছে। যদিও বাংলাদেশ সরকার মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছে, তবে সীমান্তের এই চোরাচালান বন্ধে ভারত ও বাংলাদেশের যৌথ প্রচেষ্টা অপরিহার্য।
ভারতের এই আগ্রাসন ও অবিচারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা বাড়ছে। একদিকে যেখানে দুই দেশ বন্ধুত্বের কথা বলে, সেখানে এই ধরনের কার্যকলাপ দুটি দেশের মধ্যে পারস্পরিক আস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
বাংলাদেশের জনগণকে ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। আমাদের প্রতিবেশীর সাথে সম্পর্ক রক্ষা করা জরুরি, কিন্তু সেই সম্পর্কের ভিত্তি হতে হবে সমতার উপর। ভারতকে জানাতে হবে যে, বাংলাদেশ কোনোভাবেই অন্যায় সহ্য করবে না। আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশের কণ্ঠস্বর জোরালো করে তুলে ধরা প্রয়োজন। পাশাপাশি, দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও স্বার্থ রক্ষার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের এই বিভিন্ন সমস্যা দ্রুত সমাধান করতে হবে। শক্তিশালী, স্বাবলম্বী, এবং সচেতন বাংলাদেশ গড়ে তোলাই হতে পারে এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের মূলমন্ত্র।
সূত্র:
- The Diplomat
- The Geopolitics
- Hindustan Times
- Drishti IAS
Responses