যেভাবে ফ্যাশন ও স্টাইলে নজর কেড়েছেন থাইল্যান্ডের নতুন প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা

১৪ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী স্রেথা থাভিচিনকে ক্ষমতাচ্যুত করেছেন থাইল্যান্ডের সাংবিধানিক আদালত। দুদিন পর ১৬ আগস্ট পার্লামেন্টের বেশির ভাগ সদস্যের ভোটে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা। প্রধানমন্ত্রী হতে বর্তমান পার্লামেন্টের ৪৯৩ আসনের অন্তত অর্ধেক সমর্থন প্রয়োজন ছিল তাঁর। শেষমেশ ৩১৯টি ভোট পেয়ে থাইল্যান্ডের সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব বুঝে নিয়েছেন পেতংতার্ন।

কে এই পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা

পেতংতার্নের বাবা থাকসিন সিনাওয়াত্রা পরিচিত মুখ। ধনকুবের, থাইল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পরিচিত। সিনাওয়াত্রার কনিষ্ঠ কন্যা পেতংতার্ন। থাইল্যান্ডের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রীও হলেন তিনি। ফলে প্রধানমন্ত্রিত্ব বুঝে নেওয়ামাত্রই দেশ ও দেশের বাইরে তাঁকে নিয়ে চলছে তুমুল আলোচনা।

২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন থাকসিন সিনাওয়াত্রা। পেতংতার্নের ফুফু ইংলাক সিনাওয়াত্রাও ২০১১ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত দেশটির প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। ইংলাক ছিলেন দেশটির ইতিহাসের প্রথম নারী সরকারপ্রধান। থাকসিনের আরেক বোনের স্বামী সোমচাই ইয়োংসাওয়াতও একসময় প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।

নানামুখী ব্যবসাই সিনাওয়াত্রা পরিবারের প্রধান আয়ের উৎস। সিনাওয়াত্রা পরিবারের আদিনিবাস দক্ষিণ চীনের ক্যান্টনে। থাকসিনের দাদা সেংসায়েখু চীন থেকে থাইল্যান্ডে এসে বসতি গাড়েন ১৮৬০–এর দশকে।

ফ্যাশনিস্তা পেতংতার্ন

ফ্যাশনিস্তা হিসেবে বোদ্ধা ও সাধারণ মানুষের নজর কেড়েছেন পেতংতার্ন। তাঁর পোশাকে উঠে এসেছে থাই ঐতিহ্যের পাশাপাশি আধুনিকতার সমন্বয়। কোট, প্যান্ট, টাইও পরেন। তবে স্যুটই তাঁর ‘গো টু’ আউটফিট। বেশির ভাগ সময়ই ৩৭ বছর বয়সী পেতংতার্নকে দেখা যায় টেইলর্ড স্যুটে। পেতংতার্নের ওয়ার্ডরোবের একটা বড় অংশজুড়ে আছে ক্ল্যাসিক নেভি স্যুট। রোমাঞ্চকর প্যাটার্ন, ফ্রিল, আধুনিক নকশা ও বিন্যাস এসব স্যুটকে করেছে আরও সমকালীন।

আধুনিক ‘লেডি বস’ লুকের পোশাক ছাড়াও পেতংতার্নের পরনে দেখা গেছে ঐতিহ্যবাহী থাই পোশাক ‘চুত থাই’। এ ছাড়া ঐতিহ্যবাহী পোশাক ‘নাগা’র আধুনিক সংস্করণটিও পরতে দেখা যায় তাঁকে। তবে এসব ঐতিহ্যবাহী পেশাকেও থাকে আধুনিকতার ছোঁয়া। সাধারণ তরুণ-তরুণীদের মতো টি-শার্ট, শার্ট, জিনসেও দেখা দিয়েছেন তিনি।

পেতংতার্নের লুকের ‘এক্স ফ্যাক্টর’ হলো পোশাকের সঙ্গে ব্যবহৃত বিভিন্ন অনুষঙ্গ। পেতংতার্নের ক্যারিয়ার শুরু ব্যবসায়ী হিসেবে, দুই সন্তানের মা তিনি। স্টাইলিশ ঘড়ি ব্যবহার করতে ভোলেন না। সঙ্গে হাতে দেখা যায় ব্রেসলেট। কানে, গলায় দেখা যায় সোনা, হীরার ছোট ছোট গয়না। তবে কানের দুল হিসেবে গোল রিংয়েই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন তিনি। একই গয়না বারবার পরেন। পায়ে থাকে নজরকাড়া স্টেটমেন্ট শু। পোশাকের মাধ্যমে তিনি নিজের ব্যক্তিত্ব ও কর্মজীবনের সমন্বয় করেন।

ঘর–সংসার

পেতংতার্নের স্বামী পিতাকা সুকসাওয়াত পেশাজীবন শুরু করেন বৈমানিক হিসেবে। এখন সিনাওয়াত্রা পরিবারের ব্যবসা দেখভাল করছেন। ২০২১ সালে এই দম্পতির কোলজুড়ে আসে মেয়ে থিতারা সুকসাওয়াত ও ২০২৩ সালে জন্ম নেয় পুত্র ফ্রুত্তাসিন সুকসাওয়াত।সময় পেলেই স্বামী–সন্তান নিয়ে ঘুরে বেড়ান পেতংতার্ন। দুই কন্যাকে নিয়ে সুপারশপে শপিং করেন, খেলাধুলা করেন। প্রদর্শনী ঘুরে দেখেন। আর দশ জন সাধারণ নারীর মতোই সেসব ছবি ভাগাভাগি করে নেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। পেতংতার্নের এই জীবনযাপনের সঙ্গে সহজেই অন্য থাই তরুণেরা নিজেদের মেলাতে পারছেন। ফলে পেতংতার্নের জনপ্রিয়তাও বাড়ছে।এ ছাড়া তাঁর ফ্যাশন ও স্টাইলে থাই ঐতিহ্য এবং ফরমাল লুকের যে সমন্বয়, তা–ও দেশে ও দেশের বাইরে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেতে সাহায্য করেছে।

ভালো ছাত্রী পেতংতার্ন

পেতংতার্নের শিক্ষাজীবন শুরু হয় সেন্ট জোসেফ কনভেন্ট স্কুল থেকে। এরপর মাতের দেই ক্যাথলিক স্কুল হয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য ভর্তি হন ব্যাংককের স্বনামধন্য চুলালংকর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০৮ সালে চুলালংকর্ন থেকে সমাজবিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, অর্থনীতি ও নৃবিজ্ঞানে স্নাতক শেষ করে পাড়ি জমান যুক্তরাজ্যে। ইউনিভার্সিটি অব সারে থেকে হোটেল ব্যবস্থাপনায় অর্জন করেন স্নাতকোত্তর ডিগ্রি। ভালো ছাত্রী হিসেবে নামডাক আছে পেতংতার্নের। শিক্ষাজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি রেখেছেন মেধা ও কৃতিত্বের স্বাক্ষর।

ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী

ব্যবসা থেকে রাজনীতিতে পা বাড়িয়েছেন, এমন ব্যক্তির সংখ্যা ইতিহাসে কম নয়। পেতংতার্ন তাঁদেরই একজন। উচ্চশিক্ষা শেষে পেতংতার্ন তাঁদের পারিবারিক ব্যবসার হাল ধরেন। মূলত সিনাওয়াত্রা পরিবারের হোটেল ব্যবসা সামলানোর ভার এসে পড়ে তাঁর ওপর। ‘এসসি করপোরেশন’–এর সিংহভাগ শেয়ার তাঁর দখলে। স্যাটেলাইট বা উপগ্রহ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ‘থাইকম’–এর অন্যতম পরিচালক তিনি। ব্যাংককভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ‘থানইসেতাকিজ’–এর তথ্যমতে, ২০২২ সাল পর্যন্ত পেতংতার্নের সম্পদের পরিমাণ ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

২০২১ সালে থাইল্যান্ডের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল ফিউ থাই পার্টির হাত ধরে রাজনীতিতে আসেন সিনাওয়াত্রা পরিবারের এই তরুণ সদস্য। পেতংতার্ন গত বছর প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য প্রচারণা চালান। সে সময় তাঁর দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলোর মধ্যে ছিল ব্যাংককে গণপরিবহনের খরচ কমানো, স্বাস্থ্যসেবার আওতা বৃদ্ধি এবং দৈনিক ন্যূনতম মজুরি দ্বিগুণ করা। সে সময় অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন বলে ভিডিওকেই প্রচারণার মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন পেতংতার্ন। অবশ্য সে বছর আর ফিউ থাই পার্টি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। এরপর অক্টোবরে ফিউ থাই পার্টির একজন ‘কোর মেম্বার’ হিসেবে নির্বাচিত হন তিনি।

সূত্র: আলজাজিরা ও টাইমস অব ইন্ডিয়া

Related Articles

ভারতের আগ্রাসন: পানি, সীমান্ত হত্যা ও মাদক চোরাচালানের ফাঁদে বাংলাদেশ

লিটন হোসাইন জিহাদ: ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ক বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতামূলক হলেও, কিছু ক্ষেত্রে ভারতের আগ্রাসী মনোভাব ও আচরণ বাংলাদেশের জনগণের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।…

টেলিভিশন চ্যানেলে জেলা প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগ ইন্টারভিউয়ের সময় আপনি যে প্রশ্নগুলো পাচ্ছেন

বাংলাদেশে একটি টেলিভিশন চ্যানেলে জেলা প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগ ইন্টারভিউয়ের সময় আপনি যে প্রশ্নগুলো পাচ্ছেন, তা সাধারণত আপনার সাংবাদিকতা দক্ষতা, স্থানীয় যোগাযোগের ক্ষমতা, এবং চ্যানেলের প্রয়োজনীয়তা…

তথ্যের বিশ্বে একটি নতুন দিগন্ত: pothiktv.com এর বিশ্লেষণ ও রিভিউ

pothiktv.com  একটি অনন্য সাংবাদিক কমিউনিটি এবং আইপি চ্যানেল যা সাংবাদিকদের জন্য একটি শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম প্রদান করে। এই প্ল্যাটফর্মটির মাধ্যমে সাংবাদিকরা অনলাইন থেকে রুজি এবং নিজেদের মধ্যে…

যে কারণে শিশুর ঘাড়, কাঁধ বা মাথা ধরে কখনোই ঝাঁকাবেন না

শিশুদের কোলে নেওয়ার সময় বা আদর করার সময় সামান্য অসাবধানতায় হঠাৎ করে মস্তিষ্কে আঘাত লাগতে পারে। অনেক সময় বেশি ঝাঁকুনি, কোনো কিছুর সঙ্গে ধাক্কা বা…

‘ভারতের গণমাধ্যমে ভুয়া খবর দুই দেশের সম্পর্কে প্রভাব ফেলবে’

ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থাগুলো বলছে, বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক হামলা নিয়ে ভারতের মূলধারার কিছু গণমাধ্যম ও দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের কেউ কেউ অপতথ্য ছড়াচ্ছেন। ভারতের সাংবাদিকেরা বলছেন তারাও যথযথভাবে সংবাদ যাচাই…

Responses

Your email address will not be published. Required fields are marked *